অ্যামেচার রেডিও বিষয় প্রশ্ন
অ্যামেচার রেডিও বা শৌখিন বেতার যোগাযোগ হলো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকট্রামের নির্ধারিত কিছু অংশ ব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে তথ্য আদান-প্রদান করা। যারা এই রেডিও ব্যবহার করে তাদের বলা হয় 'হ্যাম'।
এটি শুধু একটি শখ নয়, বরং এর মাধ্যমে জরুরি পরিস্থিতিতে যোগাযোগ স্থাপন এবং বিভিন্ন সামাজিক কাজেও অবদান রাখা যায়।
অ্যামেচার রেডিওর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে উল্লেখ করা হলো:
অবাণিজ্যিক যোগাযোগ: অ্যামেচার রেডিওর মূল উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিগত যোগাযোগ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং শখের চর্চা। এখানে কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানো হয় না।
জরুরি যোগাযোগ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জরুরি পরিস্থিতিতে যখন অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে, তখন অ্যামেচার রেডিওর মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: অ্যামেচার রেডিওর মাধ্যমে বেতার তরঙ্গ, ইলেকট্রনিক্স এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়।
আন্তর্জাতিক যোগাযোগ: অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা: অ্যামেচার রেডিওর মাধ্যমে বিভিন্ন বেতার তরঙ্গ এবং যোগাযোগ পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়।
অ্যামেচার রেডিও অপারেটর হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন ও লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।
বাংলাদেশে অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। নিচে এই ধাপগুলো উল্লেখ করা হলো:
বিটিআরসি পরীক্ষা:
অ্যামেচার রেডিও অপারেটর হওয়ার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক আয়োজিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়।
পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি বিটিআরসির ওয়েবসাইটে এবং জাতীয় পত্রিকাতে প্রকাশ করা হয়।
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে, বিটিআরসি একটি সনদ প্রদান করে।
কল সাইন প্রাপ্তি:
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, কল সাইনের জন্য বিটিআরসিতে আবেদন করতে হয়।
কল সাইন হলো একটি বিশেষ কোড, যা অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের পরিচয় বহন করে।
রেডিও সরঞ্জাম আমদানি:
কল সাইন পাওয়ার পর, রেডিও সরঞ্জাম আমদানি করার জন্য বিটিআরসি থেকে অনুমতি (এনওসি) নিতে হয়।
এই এনওসি পাওয়ার মাধ্যমে বৈধ উপায়ে বেতার যন্ত্র আমদানি করা যায়।
লাইসেন্স প্রাপ্তি:
রেডিও সরঞ্জাম হাতে পাওয়ার পর, রেডিও সেটের মডেল, সিরিয়াল নম্বর এবং এনওসি'সহ বিটিআরসিতে আবেদন করতে হবে।
সবকিছু ঠিক থাকলে বিটিআরসি "অ্যামেচার রেডিও অপারেটর লাইসেন্স" প্রদান করে।
অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স সম্পর্কিত আরো বিস্তারিত তথ্য এবং সর্বশেষ নিয়মাবলীর জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর ওয়েবসাইট পরিদর্শন করা যেতে পারে।
https://.btrc.gov.bd এছাড়া অ্যামেচার রেডিও সোসাইটি বাংলাদেশ এর ওয়েব সাইট ভিসিট করতে পারেন https://s21arsb.com
বাংলাদেশে অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। এই যোগ্যতাগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
বয়স:
আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
বিটিআরসি পরীক্ষা:
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক আয়োজিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
অন্যান্য যোগ্যতা:
আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
আবেদনকারীকে বেতার তরঙ্গ, ইলেকট্রনিক্স এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হবে।
এই যোগ্যতাগুলো পূরণ করার পর, আবেদনকারী বিটিআরসি-এর নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন।
জরুরি যোগাযোগ:
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন- বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, বা ভূমিকম্পের সময় যখন অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে, তখন অ্যামেচার রেডিওর মাধ্যমে জরুরি যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব।
জরুরি পরিস্থিতিতে উদ্ধারকারী দল এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে জীবন বাঁচাতে সহায়তা করা যায়।
শিক্ষা ও প্রযুক্তি:
অ্যামেচার রেডিওর মাধ্যমে বেতার তরঙ্গ, ইলেকট্রনিক্স এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়।
বিভিন্ন ধরনের বেতার সরঞ্জাম তৈরি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়।
আন্তর্জাতিক যোগাযোগ:
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে সাংস্কৃতিক বিনিময় করা যায়।
বিভিন্ন দেশের অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা যায়।
শখের চর্চা:
বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে যোগাযোগ স্থাপন করা একটি মজার ও শিক্ষণীয় শখ।
বিভিন্ন ধরনের বেতার সরঞ্জাম ব্যবহার করে শখের চর্চা করা যায়।
বাণিজ্যিক ব্যবহার:
অ্যামেচার রেডিও কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় না।
এর মাধ্যমে কোনো ধরনের পণ্য বা পরিষেবার বিজ্ঞাপন বা বিক্রি করা যায় না।
গোপনীয় যোগাযোগ:
অ্যামেচার রেডিওতে গোপনীয় বা ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদান করা উচিত নয়।
যেহেতু এটি একটি উন্মুক্ত মাধ্যম, তাই এখানে প্রেরিত বার্তা যে কেউ শুনতে পারে।
বেআইনি কার্যকলাপ:
অ্যামেচার রেডিও ব্যবহার করে কোনো ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ করা যায় না।
আইন লঙ্ঘন করে এমন কোনো বার্তা প্রেরণ করাও নিষিদ্ধ।
রাজনৈতিক বা ধর্মীয় প্রচার:
অ্যামেচার রেডিওতে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় প্রচার করা যায় না।
অ্যামেচার রেডিও পরীক্ষা কিছুটা কঠিন হতে পারে, তবে সঠিক প্রস্তুতি থাকলে তা উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব। পরীক্ষার কাঠিন্য নির্ভর করে আপনার পূর্ববর্তী জ্ঞান এবং প্রস্তুতির উপর। নিচে কিছু বিষয় আলোচনা করা হলো:
পরীক্ষার বিষয়বস্তু:
পরীক্ষায় সাধারণত বেতার তরঙ্গ, ইলেকট্রনিক্স, রেডিও সরঞ্জাম এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কিত প্রশ্ন থাকে।
এ ছাড়া, রেডিও আইনের মৌলিক বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
প্রস্তুতির গুরুত্ব:
পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতির প্রয়োজন।
বেতার তরঙ্গ, ইলেকট্রনিক্স এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকলে পরীক্ষা সহজ মনে হতে পারে।
বিটিআরসি এর পূর্বের প্রশ্ন ও তাদের ওয়েবসাইটের তথ্যগুলো ভালভাবে দেখলে পরীক্ষা সহজ হবে।
দক্ষতা যাচাই:
পরীক্ষার মাধ্যমে মূলত আপনার বেতার তরঙ্গ এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে ব্যবহারিক জ্ঞান যাচাই করা হয়।
পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার দক্ষতা যাচাই করা হবে, আপনি জরুরী অবস্থায় রেডিও ব্যবহার করে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন কিনা।
তাই, যদি আপনার বেতার তরঙ্গ এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে আগ্রহ থাকে এবং আপনি ভালোভাবে প্রস্তুতি নেন, তবে পরীক্ষাটি আপনার জন্য কঠিন হবে না।
কল সাইন এবং ফ্রিকোয়েন্সি:
প্রতিটি অ্যামেচার রেডিও অপারেটরের একটি অনন্য কল সাইন থাকে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
বিভিন্ন দেশের অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে যোগাযোগ স্থাপন করেন।
আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) গাইডলাইন অনুযায়ী প্রত্যেক অ্যামেচার রেডিও অপারেটরকে একটি করে কল সাইন দেওয়া হয়ে থাকে।
এইচএফ (হাই ফ্রিকোয়েন্সি) রেডিও:
এইচএফ রেডিওর মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে, এমনকি বিদেশেও যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব।
এই রেডিও তরঙ্গ আয়নোস্ফিয়ারের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে হাজার হাজার মাইল পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে।
স্যাটেলাইট যোগাযোগ:
অ্যামেচার স্যাটেলাইট ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অপারেটরদের সাথে যোগাযোগ করা যায়।
বেশ কিছু শৌখিন স্যাটেলাইট আছে, সেগুলোর মাধ্যমে অন্যান্য হ্যাম রেডিও অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।
এমনকি মহাকাশে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নভোচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।
ইকোলিংক:
ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইকোলিংক ব্যবহার করে ভিএইচএফ রেডিও দিয়ে সহজেই দেশের বাইরে যোগাযোগ করতে পারেন হ্যামরা।
কিউএসও (QSO):
বিদেশে যোগাযোগ করার জন্য কিউএসও একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি।
কিউএসও এর মাধ্যমে দুই বা ততোধিক অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশে অ্যামেচার রেডিওর যন্ত্রপাতি অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো:
বিটিআরসি-এর ভূমিকা:
বিটিআরসি অ্যামেচার রেডিও যন্ত্রপাতি আমদানি ও ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স এবং অনুমতি প্রদান করে।
তারা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকট্রামের ব্যবহার এবং রেডিও যন্ত্রপাতি আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে।
অনুমোদিত যন্ত্রপাতি:
সাধারণত, এইচএফ (হাই ফ্রিকোয়েন্সি) এবং ভিএইচএফ (ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি) ব্যান্ডের রেডিও যন্ত্রপাতি অ্যামেচার রেডিও ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত।
স্যাটেলাইট যোগাযোগে ব্যবহৃত রেডিও যন্ত্রপাতিও অনুমোদিত হতে পারে, তবে এর জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়।
আমদানির নিয়ম:
যেকোনো রেডিও যন্ত্রপাতি আমদানি করার আগে বিটিআরসি থেকে অনুমতি (এনওসি) নিতে হয়।
বৈধ অনুমতি ছাড়া রেডিও যন্ত্রপাতি আমদানি করা আইনত দণ্ডনীয়।
লাইসেন্সিং:
অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের জন্য বিটিআরসি লাইসেন্স প্রদান করে, যা নির্দিষ্ট কল সাইন সহ আসে।
এই লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য, বিটিআরসি আয়োজিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
অ্যামেচার রেডিও যন্ত্রপাতি সম্পর্কিত সর্বশেষ তথ্যের জন্য, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ওয়েবসাইট ভিজিট করা উচিত।
বাংলাদেশে অ্যামেচার রেডিওর জন্য পাওয়ার সীমা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দ্বারা নির্ধারিত হয়। সাধারণত, নিম্নলিখিত পাওয়ার সীমা প্রযোজ্য:
এইচএফ (HF) রেডিও: সর্বোচ্চ ১০০ ওয়াট।
ভিএইচএফ (VHF) / ইউএইচএফ (UHF) রেডিও: সর্বোচ্চ ২৫ ওয়াট।
ওয়াকি-টকি/হ্যান্ডহেল্ড রেডিও: সর্বোচ্চ ৫ ওয়াট।
বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স পাওয়ার পরই একজন অ্যামেচার রেডিও অপারেটর এই নির্দিষ্ট পাওয়ার সীমার মধ্যে থেকে রেডিও সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারে।
বাংলাদেশে অ্যামেচার রেডিও কল সাইন হলো একটি অনন্য কোড যা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক প্রতিটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত অপেশাদার রেডিও অপারেটরকে প্রদান করা হয়। এই কল সাইন অপারেটরের পরিচয় এবং লাইসেন্সকে নির্দেশ করে।
সাধারণত, বাংলাদেশের কল সাইনগুলো "S2" দিয়ে শুরু হয়। উদাহরণস্বরূপ, কিছু কল সাইন হলো S21A, S21AA, S21AB ইত্যাদি।
কল সাইন ব্যবহারের উদ্দেশ্য:
অ্যামেচার রেডিও যোগাযোগের সময় স্টেশন সনাক্ত করা।
যোগাযোগের বৈধতা নিশ্চিত করা।
আন্তর্জাতিকভাবে অপারেটরকে চিহ্নিত করা।
বিটিআরসি কল সাইন বরাদ্দ করে এবং এটি প্রতিটি অপারেটরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়।
বাংলাদেশে অ্যামেচার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিগুলি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের জন্য বরাদ্দকৃত কিছু সাধারণ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড নিচে উল্লেখ করা হলো:
এইচএফ (HF) ব্যান্ড:
এই ব্যান্ডটি দীর্ঘ-দূরত্বের যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সাধারণত, ১.৮ মেগাহার্টজ থেকে ২৯.৭ মেগাহার্টজ পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সিগুলি ব্যবহৃত হয়।
ভিএইচএফ (VHF) ব্যান্ড:
এই ব্যান্ডটি মাঝারি-দূরত্বের যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সাধারণত, ১৪৪ মেগাহার্টজ থেকে ১৪৮ মেগাহার্টজ পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সিগুলি ব্যবহৃত হয়।
ইউএইচএফ (UHF) ব্যান্ড:
এই ব্যান্ডটি স্বল্প-দূরত্বের যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সাধারণত, ৪৩০ মেগাহার্টজ থেকে ৪৪০ মেগাহার্টজ পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সিগুলি ব্যবহৃত হয়।
অ্যামেচার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি সম্পর্কিত আরও বিস্তারিত তথ্য এবং সর্বশেষ নিয়মাবলীর জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর ওয়েবসাইট পরিদর্শন করা যেতে পারে।
"২ মিটার ব্যান্ড" বলতে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকট্রামের একটি অংশকে বোঝায়, যা সাধারণত ১৪৪ থেকে ১৪৮ মেগাহার্টজ (MHz) পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি ভিএইচএফ (VHF) ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডের অংশ, যা অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা এবং অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ব্যবহার করে থাকে।
এখানে কিছু অতিরিক্ত তথ্য দেওয়া হলো:
অ্যামেচার রেডিও:
অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা ২ মিটার ব্যান্ডটি ভয়েস যোগাযোগ, ডেটা যোগাযোগ এবং অন্যান্য ধরনের রেডিও যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করে।
এই ব্যান্ডটি মাঝারি-দূরত্বের যোগাযোগের জন্য খুবই উপযোগী।
ব্যবহার:
২ মিটার ব্যান্ডটি পাবলিক সার্ভিস এজেন্সি, যেমন জরুরি সেবা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার দ্বারাও ব্যবহৃত হয়।
এই ব্যান্ডটি ওয়াকি-টকি এবং অন্যান্য পোর্টেবল রেডিও ডিভাইসের মাধ্যমে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
বৈশিষ্ট্য:
ভিএইচএফ ফ্রিকোয়েন্সি হওয়ার কারণে, ২ মিটার ব্যান্ডের রেডিও তরঙ্গগুলি সরাসরি লাইন-অফ-সাইট প্রচার করে। এর মানে হল যে বাধা, যেমন ভবন বা পাহাড়, যোগাযোগের পরিসীমা সীমিত করতে পারে।
এই ব্যান্ডটি সাধারণত এফএম (ফ্রিকোয়েন্সি মড্যুলেশন) ব্যবহার করে।
গুরুত্ব:
দুর্যোগের সময় জরুরী যোগাযোগের জন্য ২ মিটার ব্যান্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এটি বিভিন্ন কমিউনিকেশন এবং নেটওয়ার্কিং ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়।
১০ মিটার ব্যান্ড বলতে রেডিও স্পেকট্রামের একটি অংশকে বোঝায়, যা ২৮.০০ থেকে ২৯.৭০ মেগাহার্টজ (MHz) পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি হাই ফ্রিকোয়েন্সি (HF) ব্যান্ডের অংশ, যা অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা এবং অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ব্যবহার করে থাকে।
রেডিও প্রপাগেশন বলতে রেডিও তরঙ্গ কীভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হয় তা বোঝায়। এটি রেডিও যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এর মাধ্যমে রেডিও তরঙ্গ প্রেরক থেকে গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারে। রেডিও প্রপাগেশন বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে, যার মধ্যে রয়েছে ফ্রিকোয়েন্সি, বায়ুমণ্ডল এবং ভূখণ্ড।
রেডিও প্রপাগেশনের তিনটি প্রধান প্রকার রয়েছে:
গ্রাউন্ড ওয়েভ প্রপাগেশন:
এই ধরনের প্রপাগেশন পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপর দিয়ে রেডিও তরঙ্গ সঞ্চালন করে।
এটি সাধারণত কম ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্যবহৃত হয়, যেমন মিডিয়াম ওয়েভ এবং লং ওয়েভ রেডিওতে।
গ্রাউন্ড ওয়েভ প্রপাগেশন সাধারণত কয়েকশ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।
স্কাই ওয়েভ প্রপাগেশন:
এই ধরনের প্রপাগেশন আয়নোস্ফিয়ার থেকে প্রতিফলিত হয়ে রেডিও তরঙ্গ সঞ্চালন করে।
এটি সাধারণত হাই ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্যবহৃত হয়, যেমন শর্টওয়েভ রেডিওতে।
স্কাই ওয়েভ প্রপাগেশন হাজার হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।
স্পেস ওয়েভ প্রপাগেশন:
এই ধরনের প্রপাগেশন সরাসরি লাইন-অফ-সাইট রেডিও তরঙ্গ সঞ্চালন করে।
এটি সাধারণত খুব উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্যবহৃত হয়, যেমন ভিএইচএফ এবং ইউএইচএফ রেডিওতে।
স্পেস ওয়েভ প্রপাগেশন সাধারণত কয়েকশ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।
রেডিও প্রপাগেশন বিভিন্ন কারণের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
ফ্রিকোয়েন্সি: রেডিও তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি যত কম হবে, তত বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে।
বায়ুমণ্ডল: বায়ুমণ্ডল রেডিও তরঙ্গকে শোষণ এবং প্রতিফলিত করতে পারে।
ভূখণ্ড: পাহাড়, বিল্ডিং এবং অন্যান্য বাধা রেডিও তরঙ্গের সঞ্চালনকে বাধা দিতে পারে।
সৌর কার্যকলাপ: সৌর কার্যকলাপ আয়নোস্ফিয়ারকে প্রভাবিত করতে পারে, যা স্কাই ওয়েভ প্রপাগেশনকে প্রভাবিত করে।
রেডিও রিপিটার হলো একটি ডিভাইস যা রেডিও সিগন্যাল গ্রহণ করে, সেটিকে শক্তিশালী করে এবং তারপর পুনরায় প্রেরণ করে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো রেডিও সিগন্যালের পরিসীমা বাড়ানো এবং দুর্বল সিগন্যালকে শক্তিশালী করা।
এখানে রেডিও রিপিটার সম্পর্কে কিছু অতিরিক্ত তথ্য দেওয়া হলো:
কার্যকারিতা:
রেডিও রিপিটার মূলত একটি রেডিও রিসিভার এবং একটি রেডিও ট্রান্সমিটারের সমন্বয়ে গঠিত।
এটি দুর্বল রেডিও সিগন্যাল গ্রহণ করে, সেটিকে এমপ্লিফাই করে বা শক্তিশালী করে এবং তারপর পুনরায় প্রেরণ করে।
এর ফলে, রেডিও সিগন্যাল আরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে এবং প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়।
ব্যবহার:
রেডিও রিপিটার সাধারণত এমন জায়গায় ব্যবহৃত হয় যেখানে রেডিও সিগন্যালের পরিসীমা সীমিত, যেমন পাহাড়ী এলাকা, ঘন বনাঞ্চল বা শহুরে এলাকায় যেখানে উঁচু বিল্ডিং রয়েছে।
জরুরী পরিষেবা, যেমন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং অ্যাম্বুলেন্স, প্রায়শই রেডিও রিপিটার ব্যবহার করে।
অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা তাদের যোগাযোগের পরিসীমা বাড়ানোর জন্য রেডিও রিপিটার ব্যবহার করে।
প্রকারভেদ:
বিভিন্ন ধরনের রেডিও রিপিটার রয়েছে, যেমন ভিএইচএফ রিপিটার, ইউএইচএফ রিপিটার এবং এইচএফ রিপিটার।
ওয়াইফাই রিপিটার, যা ওয়াইফাই সিগন্যালকে বুস্ট করে থাকে।
সংক্ষেপে, রেডিও রিপিটার রেডিও যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দুর্বল সিগন্যালকে শক্তিশালী করে এবং যোগাযোগের পরিসীমা বাড়ায়।
অ্যামেচার রেডিও-তে "সাইলেন্ট কী" (Silent Key) হলো একজন মৃত অ্যামেচার রেডিও অপারেটরের প্রতি সম্মান জানানোর একটি শব্দ।
এই শব্দটি ব্যবহার করে মৃত অপারেটরের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
ভিএইচএফ (VHF):
বাংলাদেশে অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের দ্বারা ব্যবহৃত একটি প্রধান ব্যান্ড হলো ২-মিটার ব্যান্ড।
এই ব্যান্ডটি ১৪৪ থেকে ১৪৮ মেগাহার্টজ (MHz) সীমার মধ্যে কাজ করে এবং প্রধানত স্থানীয় যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এই স্থানীয় যোগাযোগের পরিসীমা বাড়ানোর জন্য ভিএইচএফ রিপিটারগুলি ব্যবহার করা হয়।
ইউএইচএফ (UHF):
ইউএইচএফ ব্যান্ডগুলিও স্থানীয় যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এই ব্যান্ডগুলি স্যাটেলাইট যোগাযোগ এবং পরীক্ষামূলক ক্রিয়াকলাপের মতো বিশেষ অ্যাপ্লিকেশনের জন্যও ব্যবহৃত হয়।
সাধারণত, ৪৩০ মেগাহার্টজ থেকে ৪৪০ মেগাহার্টজ পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সিগুলি ব্যবহৃত হয়।
অ্যামেচার রেডিওর এইচএফ (HF) ব্যান্ডগুলি দীর্ঘ-দূরত্বের যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ব্যান্ডগুলি এবং তাদের ব্যবহার সম্পর্কে কিছু তথ্য নিচে দেওয়া হলো:
এইচএফ (HF) ব্যান্ড:
এই ব্যান্ডটি দীর্ঘ-দূরত্বের যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সাধারণত, ১.৮ মেগাহার্টজ থেকে ২৯.৭ মেগাহার্টজ পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সিগুলি ব্যবহৃত হয়।
এই ফ্রিকোয়েন্সি আয়নোস্ফিয়ারের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করতে সক্ষম।
ব্যবহারের ধরন:
ডিএক্সিং (DX-ing) অর্থাৎ দূরবর্তী স্থানের সাথে যোগাযোগ করা।
আন্তর্জাতিক অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা।
দুর্যোগ ও জরুরি অবস্থায় যোগাযোগ রক্ষা করা।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দ্বারা নির্ধারিত ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ এবং ব্যবহার সম্পর্কিত নিয়মগুলি মেনে চলা অপরিহার্য।
বাংলাদেশে অ্যামেচার রেডিওর জন্য পাওয়ার সীমা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দ্বারা নির্ধারিত হয়। এইচএফ (HF) রেডিওর ক্ষেত্রে এর সর্বোচ্চ সীমা ১০০ ওয়াট।
অ্যামেচার রেডিও ব্যান্ড এবং সময় বলতে, মূলত অ্যামেচার রেডিওর ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড এবং কোন সময়ে কোন ব্যান্ডের অবস্থা কেমন থাকে, সেই বিষয়গুলো বোঝায়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হলো:
অ্যামেচার রেডিও ব্যান্ড:
এইচএফ (HF): ১.৮ মেগাহার্টজ থেকে ২৯.৭ মেগাহার্টজ পর্যন্ত। এই ব্যান্ড দীর্ঘ-দূরত্বের যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ভিএইচএফ (VHF): ১৪৪ থেকে ১৪৮ মেগাহার্টজ পর্যন্ত। এটি স্থানীয় যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ইউএইচএফ (UHF): ৪৩০ থেকে ৪৪০ মেগাহার্টজ পর্যন্ত। এটিও স্থানীয় যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সময় এবং ব্যান্ডের ব্যবহার:
এইচএফ ব্যান্ড: এই ব্যান্ডে যোগাযোগের জন্য সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আয়নোস্ফিয়ারের অবস্থার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যান্ডে যোগাযোগ করা যায়। যেমন, রাতে ৪০ মিটার ব্যান্ডে ভালো যোগাযোগ করা যায়, আবার দিনের বেলায় ২০ মিটার ব্যান্ডে ভালো যোগাযোগ করা যায়।
ভিএইচএফ এবং ইউএইচএফ ব্যান্ড: এই ব্যান্ডগুলো মূলত স্থানীয় যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়, তাই সময়ের প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম। তবে, আবহাওয়ার পরিবর্তন এই ব্যান্ডগুলোর যোগাযোগকে প্রভাবিত করতে পারে।
অ্যামেচার রেডিও অ্যান্টেনা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকারের অ্যান্টেনার নাম উল্লেখ করা হলো:
ডাইপোল অ্যান্টেনা (Dipole Antenna): এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং সহজ অ্যান্টেনা। এটি দুটি তারের সমন্বয়ে গঠিত, যা একটি কেন্দ্রীয় বিন্দুতে সংযুক্ত থাকে।
ভার্টিকাল অ্যান্টেনা (Vertical Antenna): এই অ্যান্টেনাটি একটি উল্লম্ব তারের সমন্বয়ে গঠিত। এটি সাধারণত গ্রাউন্ড প্লেনের উপর স্থাপন করা হয়।
ইয়গি-উদা অ্যান্টেনা (Yagi-Uda Antenna): এটি একটি নির্দেশমূলক অ্যান্টেনা, যা একটি ড্রাইভিং উপাদান, একটি রিফ্লেক্টর এবং একাধিক ডিরেক্টর সমন্বয়ে গঠিত।
কোয়াড অ্যান্টেনা (Quad Antenna): এই অ্যান্টেনাটি বর্গাকার লুপের সমন্বয়ে গঠিত। এটি উচ্চ লাভ এবং কম গোলমাল বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
লং ওয়্যার অ্যান্টেনা (Long Wire Antenna): এটি একটি দীর্ঘ তারের সমন্বয়ে গঠিত, যা সাধারণত কয়েক তরঙ্গদৈর্ঘ্য দীর্ঘ হয়।
লুপ অ্যান্টেনা (Loop Antenna): এটি একটি বৃত্তাকার বা বর্গাকার লুপের সমন্বয়ে গঠিত। এটি কমপ্যাক্ট এবং পোর্টেবল।
হর্ন অ্যান্টেনা (Horn Antenna): এটি একটি ফ্লেয়ারড টিউবের মতো আকৃতির অ্যান্টেনা। এটি উচ্চ লাভ এবং নির্দেশমূলক বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
প্যারাবোলিক ডিশ অ্যান্টেনা (Parabolic Dish Antenna): এটি একটি প্যারাবোলিক প্রতিফলকের সমন্বয়ে গঠিত। এটি খুব উচ্চ লাভ এবং নির্দেশমূলক বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
গ্রাউন্ড প্লেন অ্যান্টেনা (Ground Plane Antenna): এটি একটি ভার্টিকাল অ্যান্টেনা, যার চারপাশে একাধিক অনুভূমিক তার থাকে।
ওয়্যার অ্যান্টেনা (Wire Antenna): অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা বিভিন্ন ধরনের তার ব্যবহার করে অ্যান্টেনা তৈরি করে থাকেন। যেমন, কপার ওয়্যার, অ্যালুমিনিয়াম ওয়্যার ইত্যাদি।
অ্যান্টেনার প্রকারভেদ নির্ভর করে এর ডিজাইন, ফ্রিকোয়েন্সি এবং ব্যবহারের উপর। অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টেনা ব্যবহার করে থাকেন।
বৈদ্যুতিক পরিমাপের ক্ষেত্রে অ্যাম্পিয়ার (ampere) এবং ওয়াট (watt) দুটি মৌলিক একক। নিচে এদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
অ্যাম্পিয়ার (ampere):
অ্যাম্পিয়ার হলো বৈদ্যুতিক প্রবাহের একক। সহজভাবে বলতে গেলে, কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে কতটুকু ইলেকট্রন প্রবাহিত হচ্ছে, তা অ্যাম্পিয়ার দিয়ে মাপা হয়।
এটি বৈদ্যুতিক সার্কিটে প্রবাহিত কারেন্টের পরিমাণ নির্দেশ করে।
অ্যাম্পিয়ারকে সাধারণত "A" অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
অ্যামিটার (ammeter) নামক যন্ত্রের সাহায্যে অ্যাম্পিয়ার মাপা হয়।
ওয়াট (watt):
ওয়াট হলো বৈদ্যুতিক ক্ষমতার একক। সহজভাবে বলতে গেলে, কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্র প্রতি সেকেন্ডে কতটুকু শক্তি ব্যবহার করছে, তা ওয়াট দিয়ে মাপা হয়।
এটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রের শক্তি ব্যবহারের হার নির্দেশ করে।
ওয়াটকে সাধারণত "W" অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
ওয়াটমিটার (wattmeter) নামক যন্ত্রের সাহায্যে ওয়াট মাপা হয়।
অ্যাম্পিয়ার ও ওয়াটের মধ্যে সম্পর্ক:
ওয়াট, ভোল্টেজ (voltage) এবং অ্যাম্পিয়ারের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কটি হলো: ওয়াট = ভোল্টেজ × অ্যাম্পিয়ার।
অর্থাৎ, কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ওয়াট বের করতে হলে, যন্ত্রের ভোল্টেজ এবং অ্যাম্পিয়ার গুণ করতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো যন্ত্র ২২০ ভোল্ট এবং ৫ অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট ব্যবহার করে, তাহলে যন্ত্রটির ওয়াট হবে ২২০ × ৫ = ১১০০ ওয়াট।
ব্যবহারিক উদাহরণ:
একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব কত ওয়াটের, তা দেখে বোঝা যায় বাল্বটি কতটুকু শক্তি ব্যবহার করছে।
একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র কত অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট ব্যবহার করে, তা দেখে বোঝা যায় যন্ত্রটি সার্কিটের উপর কতটুকু চাপ সৃষ্টি করছে।
২০ মিটার ব্যান্ড বলতে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির একটি অংশকে বোঝায়, যা সাধারণত ১৪ মেগাহার্টজ (MHz) এর কাছাকাছি থাকে। এটি হ্যাম রেডিও অপারেটরদের (Amateur radio operators) মধ্যে খুবই জনপ্রিয় একটি ব্যান্ড। এই ব্যান্ডটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। নিচে এর কিছু ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:
হ্যাম রেডিও যোগাযোগ: ২০ মিটার ব্যান্ড হ্যাম রেডিও অপারেটরদের মধ্যে দূরপাল্লার যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি দিনের বেলা এবং রাতের বেলা উভয় সময়েই যোগাযোগের জন্য বেশ উপযোগী।
আন্তর্জাতিক যোগাযোগ: এই ব্যান্ডের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হ্যাম রেডিও অপারেটরদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়।
জরুরী যোগাযোগ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জরুরী পরিস্থিতিতে এই ব্যান্ডটি দূরপাল্লার যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিভিন্ন রেডিও তরঙ্গ: ২০ মিটার ব্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন: CW, SSB, এবং ডিজিটাল মোড।
এই ব্যান্ডটি ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স প্রয়োজন হয় এবং প্রতিটি দেশের নিজস্ব নিয়মকানুন রয়েছে।
৬ মিটার ব্যান্ড হলো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির একটি অংশ, যা ৫০ থেকে ৫৪ মেগাহার্টজ (MHz) এর মধ্যে অবস্থিত। এটি হ্যাম রেডিও অপারেটরদের (Amateur radio operators) জন্য একটি বিশেষ ব্যান্ড। এই ব্যান্ডটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। নিচে এর কিছু ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:
হ্যাম রেডিও যোগাযোগ: ৬ মিটার ব্যান্ড হ্যাম রেডিও অপারেটরদের মধ্যে দূরপাল্লার যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ব্যান্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের হ্যাম রেডিও অপারেটরদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়।
বিভিন্ন রেডিও তরঙ্গ: ৬ মিটার ব্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন: CW, SSB, এবং ডিজিটাল মোড।
রেডিও নিয়ন্ত্রণ: উত্তর আমেরিকা, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায়, ৬ মিটার ব্যান্ড লাইসেন্সপ্রাপ্ত অপেশাদারদের রেডিও-নিয়ন্ত্রিত (RC) বিমান এবং অন্যান্য ধরণের রেডিও নিয়ন্ত্রণ অপারেশনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
এফএম যোগাযোগ: এই ব্যান্ডে এফএম যোগাযোগ, রিপিটার অপারেশন এবং সিমপ্লেক্স অপারেশনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
৬ মিটার ব্যান্ড এর বিশেষত্ব:
এই ব্যান্ডটি VHF (Very High Frequency) এবং HF (High Frequency) উভয় ব্যান্ডের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।
অপারেটরদের অপ্রত্যাশিত দূরত্বে যোগাযোগ করতে দেয়।
এই ব্যান্ডে আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে।
এই ব্যান্ডে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের রেডিও তরঙ্গ শোনা যায়।
৬ মিটার ব্যান্ডকে "ম্যাজিক ব্যান্ড" বলা হয়।
এই ব্যান্ডটি ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স প্রয়োজন হয় এবং প্রতিটি দেশের নিজস্ব নিয়মকানুন রয়েছে।
৪০ মিটার ব্যান্ড হলো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির একটি অংশ, যা ৭ মেগাহার্টজ (MHz) এর কাছাকাছি অবস্থিত। এটি হ্যাম রেডিও অপারেটরদের (Amateur radio operators) মধ্যে খুবই জনপ্রিয় একটি ব্যান্ড। এই ব্যান্ডটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। নিচে এর কিছু ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:
হ্যাম রেডিও যোগাযোগ: ৪০ মিটার ব্যান্ড হ্যাম রেডিও অপারেটরদের মধ্যে দূরপাল্লার যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ব্যান্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের হ্যাম রেডিও অপারেটরদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়।
আন্তর্জাতিক যোগাযোগ: এই ব্যান্ডের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হ্যাম রেডিও অপারেটরদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব।
বিভিন্ন রেডিও তরঙ্গ: ৪০ মিটার ব্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন: CW, SSB, এবং ডিজিটাল মোড।
দূরপাল্লার যোগাযোগ: এই ব্যান্ডটি দিনের বেলা এবং রাতের বেলা উভয় সময়েই দূরপাল্লার যোগাযোগের জন্য বেশ উপযোগী।
জরুরী যোগাযোগ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জরুরী পরিস্থিতিতে এই ব্যান্ডটি দূরপাল্লার যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
অ্যামেচার রেডিও কিউ কোড হলো তিন অক্ষর বিশিষ্ট কোডের একটি মানসম্মত সেট, যার প্রতিটি অক্ষর "কিউ" (Q) দিয়ে শুরু হয়। এই কোডগুলি রেডিও যোগাযোগে, বিশেষ করে অ্যামেচার রেডিওতে ব্যবহৃত হয়। এই কোডগুলির উদ্দেশ্য হলো দ্রুত এবং স্পষ্ট যোগাযোগ প্রদান করা, বিশেষ করে দুর্বল সিগন্যালের মতো পরিস্থিতিতে যেখানে স্পষ্টতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যামেচার রেডিওতে কিউ কোডের গুরুত্ব:
উদ্দেশ্য:
কিউ কোড প্রাথমিকভাবে বাণিজ্যিক রেডিও টেলিগ্রাফ যোগাযোগের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা দ্রুত যোগাযোগ করতে এবং সাধারণ বার্তাগুলি দক্ষতার সাথে জানাতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে।
যোগাযোগ কঠিন হলে এবং কথোপকথন সংক্ষিপ্ত করতে এটি খুব সহায়ক।
মূল বৈশিষ্ট্য:
প্রতিটি কিউ কোড তিনটি অক্ষর নিয়ে গঠিত, যা সর্বদা "কিউ" দিয়ে শুরু হয়।
এই কোডগুলি প্রশ্ন এবং বিবৃতি উভয়ই উপস্থাপন করতে পারে।
এগুলি সিগন্যালের শক্তি এবং পঠনযোগ্যতা থেকে শুরু করে অবস্থান এবং সময় পর্যন্ত বিস্তৃত সাধারণ যোগাযোগের চাহিদাগুলি কভার করে।
অ্যামেচার রেডিওতে সাধারণত ব্যবহৃত কিউ কোড:
কিউআরএ (QRA): আপনার স্টেশনের নাম কী?
কিউআরবি (QRB): আমার স্টেশন থেকে আপনি কত দূরে?
কিউআরজি (QRG): আপনি কি আমাকে আমার সঠিক ফ্রিকোয়েন্সি বলবেন?
কিউআরএইচ (QRH): আমার ফ্রিকোয়েন্সি কি পরিবর্তিত হয়?
কিউআরকে (QRK): আমার সিগন্যালের পঠনযোগ্যতা কী?
কিউআরএল (QRL): আপনি কি ব্যস্ত?
কিউআরএম (QRM): আপনি কি হস্তক্ষেপ অনুভব করছেন?
কিউআরএন (QRN): আপনি কি স্ট্যাটিক দ্বারা সমস্যায় পড়েছেন?
কিউআরও (QRO): আমি কি ট্রান্সমিট পাওয়ার বাড়াব?
কিউআরপি (QRP): আমি কি ট্রান্সমিট পাওয়ার কমাব?
কিউআরটি (QRT): আমি কি ট্রান্সমিশন বন্ধ করব?
কিউআরজেড (QRZ): কে আমাকে ডাকছে?
কিউএসএ (QSA): আমার সিগন্যালের শক্তি কী?
কিউএসএল (QSL): আপনি কি প্রাপ্তি স্বীকার করতে পারেন?
কিউএসও (QSO): আপনি কি... এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন?
কিউটিএইচ (QTH): আপনার অবস্থান কী?
কিউটিআর (QTR): সঠিক সময় কী?
সংক্ষেপে, কিউ কোড রেডিও অপারেটরদের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত ভাষা হিসাবে কাজ করে, যা তাদের দক্ষতার সাথে এবং কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে সক্ষম করে।
অ্যামেচার রেডিওতে সিগন্যাল রিপোর্ট দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। এটি সাধারণত "আরএসটি" (RST) কোড ব্যবহার করে করা হয়। আরএসটি কোডের পূর্ণরূপ হলো রিডেবিলিটি (Readability), স্ট্রেংথ (Strength) এবং টোন (Tone)।
রিডেবিলিটি (Readability):
এটি সিগন্যালের পঠনযোগ্যতা নির্দেশ করে।
১ থেকে ৫ পর্যন্ত স্কেলে এটি পরিমাপ করা হয়।
১ মানে খুবই খারাপ এবং ৫ মানে খুবই ভালো।
স্ট্রেংথ (Strength):
এটি সিগন্যালের শক্তি নির্দেশ করে।
১ থেকে ৯ পর্যন্ত স্কেলে এটি পরিমাপ করা হয়।
১ মানে খুবই দুর্বল এবং ৯ মানে খুবই শক্তিশালী।
টোন (Tone):
এটি সিগন্যালের স্বর বা সুর নির্দেশ করে।
১ থেকে ৯ পর্যন্ত স্কেলে এটি পরিমাপ করা হয়।
১ মানে খুবই খারাপ এবং ৯ মানে খুবই ভালো।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ বলে "আপনার সিগন্যাল ৫৯৯", তাহলে এর মানে হলো সিগন্যালটি খুবই ভালো (৫), খুবই শক্তিশালী (৯) এবং এর সুরও খুবই ভালো (৯)।
Amateur Radio band গুলো বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জে কাজ করে এবং এদের কাজের সময় propagation-এর ওপর নির্ভর করে। নিচে কিছু জনপ্রিয় ব্যান্ডের কাজের সময় এবং বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো:
হাই ফ্রিকোয়েন্সি (HF) ব্যান্ড: এই ব্যান্ডগুলো সাধারণত দূরপাল্লার যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
160 মিটার (1.8 - 2.0 MHz): দিনের বেলায় শোষণের কারণে কম দূরত্বে কাজ করে। রাতে, বিশেষ করে শীতকালে, F-লেয়ার স্কিপের মাধ্যমে দীর্ঘ দূরত্বে যোগাযোগ সম্ভব।
80 মিটার (3.5 - 4.0 MHz): দিনের বেলায় প্রায় 400 কিলোমিটার পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়। রাতে D-লেয়ার অদৃশ্য হয়ে গেলে 1000 কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে যোগাযোগ সম্ভব। শীতকালে DX (দূরবর্তী) যোগাযোগ ভালো হয়।
40 মিটার (7.0 - 7.3 MHz): দিনের বেলায় প্রায় 1000 কিলোমিটার পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়। রাতে F2 লেয়ারের মাধ্যমে সারা বিশ্বে যোগাযোগ সম্ভব। কম সৌর কার্যকলাপের সময়ও রাতে DX যোগাযোগ ভালো থাকে।
30 মিটার (10.1 - 10.15 MHz): দিনের বেলায় প্রায় 3000 কিলোমিটার এবং রাতে তারও বেশি দূরত্বে যোগাযোগ করা যায়। এটি 24 ঘণ্টাই F2 লেয়ারের মাধ্যমে কাজ করে এবং সৌর কার্যকলাপের ওপর তেমন নির্ভরশীল নয়।
20 মিটার (14.0 - 14.35 MHz): দিনের বেলায় আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য খুবই নির্ভরযোগ্য। উচ্চ সৌর কার্যকলাপের সময় এটি দীর্ঘ সময় ধরে খোলা থাকে।
17 মিটার (18.068 - 18.168 MHz): 20 মিটারের মতোই, তবে সৌর কার্যকলাপের ওপর বেশি নির্ভরশীল। উচ্চ সৌর কার্যকলাপের সময় দিনের বেলায় এবং সন্ধ্যায় দীর্ঘ দূরত্বে যোগাযোগ ভালো হয়।
15 মিটার (21.0 - 21.45 MHz): উচ্চ সৌর কার্যকলাপের বছরগুলোতে DX যোগাযোগের জন্য প্রধান ব্যান্ড। সূর্যাস্তের পর বন্ধ হয়ে যায়।
12 মিটার (24.89 - 24.99 MHz): 10 এবং 15 মিটারের বৈশিষ্ট্য মিশ্রিত। উচ্চ সৌর কার্যকলাপের সময় সূর্যাস্তের পরেও খোলা থাকতে পারে।
10 মিটার (28.0 - 29.7 MHz): সৌর কার্যকলাপের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল। উচ্চ সৌর কার্যকলাপের সময় F2 লেয়ারের মাধ্যমে দীর্ঘ দূরত্বে যোগাযোগ সম্ভব। VHF-এর মতো propagation মোডও দেখা যায়।
ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি (VHF) এবং আলট্রা হাই ফ্রিকোয়েন্সি (UHF) ব্যান্ড: এই ব্যান্ডগুলো সাধারণত সরাসরি যোগাযোগ (line-of-sight) এবং রিপিটারের মাধ্যমে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
6 মিটার (50 - 54 MHz): দিনের বেলায় Sporadic E (Es) এবং উচ্চ সৌর কার্যকলাপের সময় দীর্ঘ দূরত্বে যোগাযোগ সম্ভব।
2 মিটার (144 - 148 MHz): স্থানীয় যোগাযোগের জন্য খুবই জনপ্রিয়। রিপিটার এবং সরাসরি যোগাযোগ উভয়ই সম্ভব।
70 সেন্টিমিটার (420 - 450 MHz): 2 মিটারের মতোই, তবে আরও বেশি স্থানীয় যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
বিভিন্ন ব্যান্ডের propagation বৈশিষ্ট্য সময়, ঋতু এবং সৌর কার্যকলাপের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
রেজিস্টার (Resistor) এবং ক্যাপাসিটর (Capacitor) ইলেকট্রনিক সার্কিটের দুটি মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ প্যাসিভ কম্পোনেন্ট। এদের কাজ এবং বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। নিচে এদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
রেজিস্টার (Resistor):
কাজ: রেজিস্টরের প্রধান কাজ হলো ইলেকট্রনিক সার্কিটে কারেন্টের প্রবাহকে বাধা দেওয়া বা সীমিত করা। এটি ভোল্টেজ ড্রপ তৈরি করতে এবং সার্কিটের বিভিন্ন অংশে কারেন্ট নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হয়। রেজিস্টর ইলেকট্রিক্যাল এনার্জিকে তাপে রূপান্তরিত করে।
বৈশিষ্ট্য:
এর রোধ (Resistance) থাকে, যা ওহম (Ω) এককে পরিমাপ করা হয়।
ফিক্সড (স্থির মান) বা ভেরিয়েবল (পরিবর্তনযোগ্য মান) হতে পারে।
বিভিন্ন পাওয়ার রেটিং-এর হয়ে থাকে, যা নির্দেশ করে এটি কতটা তাপ dissipation করতে পারবে।
ওহমের সূত্র মেনে চলে: V=IR (যেখানে V হলো ভোল্টেজ, I হলো কারেন্ট এবং R হলো রোধ)।
ব্যবহার:
কারেন্ট সীমিতকরণ (Current limiting)।
ভোল্টেজ বিভাজন (Voltage division)।
পুল-আপ এবং পুল-ডাউন রেজিস্টর হিসেবে ব্যবহার।
LED-এর কারেন্ট নিয়ন্ত্রণ।
হিটিং উপাদান হিসেবে (যেমন ইলেকট্রিক হিটার)।
ক্যাপাসিটর (Capacitor):
কাজ: ক্যাপাসিটরের প্রধান কাজ হলো ইলেকট্রিক্যাল চার্জ বা শক্তি সঞ্চয় করা। এটি দুটি পরিবাহী প্লেটের মধ্যে একটি অন্তরক (ডাইইলেকট্রিক) পদার্থ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। যখন এর দুই প্রান্তে ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয়, তখন প্লেটগুলোতে চার্জ জমা হতে শুরু করে।
বৈশিষ্ট্য:
এর ক্যাপাসিট্যান্স (Capacitance) থাকে, যা ফ্যারাড (F) এককে পরিমাপ করা হয়।
ফিক্সড (স্থির মান) বা ভেরিয়েবল (পরিবর্তনযোগ্য মান) হতে পারে।
বিভিন্ন ভোল্টেজ রেটিং-এর হয়ে থাকে, যা নির্দেশ করে এটি কত ভোল্টেজ সহ্য করতে পারবে।
চার্জ এবং ভোল্টেজের মধ্যে সম্পর্ক: Q=CV (যেখানে Q হলো চার্জ, C হলো ক্যাপাসিট্যান্স এবং V হলো ভোল্টেজ)।
ব্যবহার:
এনার্জি স্টোরেজ (যেমন ক্যামেরা ফ্ল্যাশে)।
ফিল্টারিং (AC সিগন্যাল থেকে DC সিগন্যাল আলাদা করা বা নয়েজ কমানো)।
টাইমিং সার্কিটে (যেমন RC টাইমার)।
কাপলিং এবং ডিকাপলিং (সিগন্যাল এক অংশ থেকে অন্য অংশে পাঠানো বা অবাঞ্ছিত কাপলিং কমানো)।
পাওয়ার সাপ্লাইতে ভোল্টেজ স্থিতিশীল রাখা।
সংক্ষেপে, রেজিস্টর কারেন্টের প্রবাহকে বাধা দেয় এবং শক্তি dissipation করে, অন্যদিকে ক্যাপাসিটর চার্জ সঞ্চয় করে এবং শক্তি ধরে রাখে। ইলেকট্রনিক সার্কিটের নকশায় এই দুটি কম্পোনেন্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ওহমের সূত্র (Ohm's Law) ভোল্টেজ (V), কারেন্ট (I) এবং রোধের (R) মধ্যেকার সম্পর্ক স্থাপন করে:
V=IR
যেখানে:
V হলো ভোল্টেজ (ভোল্টে)।
I হলো কারেন্ট (অ্যাম্পিয়ারে)।
R হলো রোধ (ওহমে)।
ওয়াট (ক্ষমতা) ভোল্টেজ এবং কারেন্টের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত:
P=VI
যেখানে:
P হলো ক্ষমতা (ওয়াটে)।
V হলো ভোল্টেজ (ভোল্টে)।
I হলো কারেন্ট (অ্যাম্পিয়ারে)।
এই তিনটি ধারণা ইলেকট্রনিক সার্কিট বোঝা এবং ডিজাইন করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভোল্টেজ ইলেকট্রনের প্রবাহের কারণ, কারেন্ট হলো সেই প্রবাহের হার এবং ওয়াট হলো সেই হারে শক্তি ব্যবহারের পরিমাণ।
Post Views: 1,323